প্রথম পাতা
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তারেক রহমানের
স্টাফ রিপোর্টার
২ জুলাই ২০২৫, বুধবার
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন- সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা দেশে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তিমূলক সমাজ এবং অস্থিতিশীল সরকার সৃষ্টির কারণ হতে পারে কিনা, এই বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে আরও একবার ভেবে দেখার জন্য আমি সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বিনীত অনুরোধ করবো। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের আড়ালে পুনরায় দেশে নিজেদের অজান্তে পতিত, পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের পথ সুগম করে দেবে, এই বিষয়টিও সবাইকে অত্যন্ত সিরিয়াসলি ভাবা দরকার বলেও মনে করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। মঙ্গলবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি’র উদ্যোগে ‘গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’- শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদদের সম্মানে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। এতে গুলশানের বাসায় ফিরোজা থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত ‘জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’- শীর্ষক একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একটি ইস্যুকে আরেকটি ইস্যুর বেড়াজালে আটকিয়ে না রাখা উচিত বলে গণতন্ত্রকামী জনগণ বিশ্বাস করে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে বিভিন্ন দল চিন্তা-ভাবনা করে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। দেশ এবং জনগণের কল্যাণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই যার যার বিবেচনায় উত্তম প্রস্তাবই উপস্থাপন করেছেন। তবে প্রস্তাব ভালো হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য উপযোগী কি না, সেটি বিবেচনা করার জন্য আপনাদের আমি আহ্বান জানাই। কোনো কোনো দল সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। বিশ্বের কোনো কোনো দেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতা, ভৌগলিক বিবেচনা এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য এই ব্যবস্থা কতটুকু উপযোগী বা উপযোগী কি না, সেটি ভেবে দেখার জন্য আমি সকলের প্রতি অনুরোধ রাখবো।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিধি- ব্যবস্থাকে ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে হলে বাংলাদেশকে তাঁবেদারমুক্ত রাখতে হলে, এই মুহূর্তে জনগণের ঐক্য সবচাইতে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু সংখ্যানুপাতিন নির্বাচন ব্যবস্থা দেশে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তিমূলক সমাজ এবং অস্তিতিশীল সরকার সৃষ্টির কারণ হতে পারে কি না, এই বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে আরও একবার ভেবে দেখার জন্য আমি সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বিনীত অনুরোধ করবো। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের আড়ালে পুনরায় দেশে নিজেদের অজান্তে পতিত, পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের পথ সুগম করে দেবে এই বিষয়টিও সবাইকে অত্যন্ত সিরিয়াসলি ভাবা দরকার।
তারেক রহমান বলেন, আগামীদিনে আর কোনো শক্তি বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়, সংবিধান লঙ্ঘনকারী পলাতক অপশক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। দেশ এবং জনগণের বিরুদ্ধে আর কেউ যাতে অপতৎপরতা চালাতে না পারে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে, এসব বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রয়েছে, ভবিষ্যতেও তা অটুট থাকবে। আমি এবং আমার দল বিএনপি দেশকে এমন একটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চাই- যেখানে দল এবং রাজনৈতিক সরকারের সকল নিয়ন্ত্রক থাকবে জনগণ। জনগণই তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে, স্থানীয় সরকার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে, নির্ধারিত সময় পর সেই সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতাও জনগণের হাতে থাকবে।
একজন শহীদ শুধু আপনার স্বজন নয় তিনি জাতির গৌরব এবং মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের স্বজন হারানোর বেদনা, সহ্যশক্তি সংগ্রাম, সাহসের প্রতি গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আবারো জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। আজ আপনাদের সামনে আমি এবং আমরা আবারো একটি প্রত্যয় ব্যক্ত করতে চাই। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন বাংলাদেশ ভুলেনি। ২০২৪ সালে দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে বীর শহীদদের বাংলাদেশ কখনোই ভুলবে না। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পেলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের স্থাপনায় নামকরণের ইচ্ছে আমাদের আছে।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, চোখ কিংবা হাত হারিয়ে এক হাজারেরও বেশি মানুষ চিরতরে অন্ধত্ব কিংবা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। মাত্র ৩৬ দিনেই চার বছরের শিশু আবদুল আহাদ, ৬ বছরের শিশু রিয়াসহ কমপক্ষে ১৩৬ জনের বেশি শিশু শহীদ হয়েছেন। এমন নৃশংসতা ছিল অকল্পনীয়। ’৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ, ’৭৫-এর নভেম্বরে আধিপত্যবিরোধী তাঁবেদারমুক্ত বাংলাদেশ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী বাংলাদেশ এবং ’২৪-এর ফ্যাসিবাদবিরোধী বাংলাদেশ- বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ে শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধের মতো হাজারো লাখো মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছেন, হতাহত হয়েছেন আরও বহু। তাদের দাবি ছিল রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা। বর্তমানে ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে জনগণের সামনে একটি আধুনিক ও প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ হয়েছে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই এ সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পেলে, জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ ও জাতির উন্নয়নে প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। একটি দুর্নীতিমুক্ত, গণতন্ত্রী বাংলাদেশ গড়ার সুমহান লক্ষ্যে, দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মসূচিগত পার্থক্যের কারণে ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলোর অনৈক্য মনে হলেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। হাজারো শহীদের রাজপথে রক্তস্নাতের মধ্যদিয়ে এই জাতি গড়ে উঠেছে। ৫ই আগস্ট এর জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রতিটি ইস্যুতে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হওয়া জরুরি নয়। তবে অবশ্যই জাতীয় ইস্যুতে জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য থাকাটা বেশি জরুরি। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
পাঠকের মতামত
Tareq Rahman is a nationalist, no doubt. But, unfortunately, his party BNP has been taken over by trained and ruthless RAW agents such as SALAHUDDIN AHMED. If the nationalist part of the BNP now fails to support Tareq Rahman and get rid of RAW agents NOW then it will be too late. We are living in a new era, the era of social media, YouTube, and so on. Everyone knows (with evidence) who the RAW agents are in BNP. They will act against BNP during the election unless these RAW agents are kicked out from the party (or at least from important positions) as a matter of URGNECY.
PR পদ্ধতিতে ভোট হলে বিএনপি একক ভাবে পার্লামেন্টে সরকার গঠন করতে পারবে।ইনশাল্লাহ
তারেক রহমানের প্রশ্ন যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তব সম্মত।
চমৎকার বক্তব্য। জনাব তারিক রহমান সবসময়ই বিনয়, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলেন। আশা করতে পারি তিনি ক্ষমতায় এসে তার দলের উচ্ছৃঙ্খল, চাঁদাবাজ এবং দখলবাজ অপশক্তিকে তিনি নির্মূল করবেন।
পিআর পদ্ধতি সেই বিদেশী অপশক্তির এজেন্ডা যারা তাদের দাসীকে ১৬ বছর অবৈধ ক্ষমতায় রাখতে এদেশের আইন কানুন নির্বাচন কিচ্ছু মানে নাই, জনগনকে কিছু বলতে দেয় নাই, কোন পদ্ধতি তো দুরের কথা, টুশব্দটিও করতে দেয় নাই। এখন সুষ্ঠভোটে জনগনের সরকার ক্ষমতায় আসলে সামনে অবশ্যই গনহত্যা করা পিশাচদের কঠিন বিচার হবে। বিষয়টি বুঝতে পেরে গনহত্যার আসামীরা ওদের বস্ অতিচালাক সেই অপশক্তি দিয়ে এদেশের কিছু মির্জাফর মুনাফিক ভাড়া করে তাদের মাধ্যমে আগামীর সরকারকে দুর্বল করতে উঠেপরে লেগেছে। জনগন সাবধান এখনি সতর্ক হোন, গনহত্যা করা ডাকাত খুনি রাক্ষসদের কোন চক্রান্তের ফাঁদে কেউ কিছুতেই পা দিবেন না।
No political party shall be allowed to decide how the country should be run. It shall be decided by the people of Bangladesh.