ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

মত-মতান্তর

মহীশূর ও হায়দারাবাদ কথা

গাজী মিজানুর রহমান

(৮ মাস আগে) ৬ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ১১:১০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:৩৬ অপরাহ্ন

mzamin

বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে তারই প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় ইংরেজ বাহিনীর নিকট নবাব বাহিনীর পরাজয় ঘটে। এরপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কলকাতা এবং মাদ্রাজ কুঠি এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করে। বাংলার সাফল্যে অনুপ্রাণিত ইংরেজ শিবির দক্ষিণ ভারতে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।  

দাক্ষিণ্যাত্যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী  শক্তি হওয়ার পথে ইংরেজদের প্রধান বাধা ছিল মহীশূরের সুলতান হায়দার আলী। ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক অগ্রগতি থামাতে পিতা হায়দার আলী ও পুত্র টিপু সুলতানের অবদানের কথা কে না জানে । এই দুই মহীশূর সুলতান ভারতবর্ষের এক ক্রান্তিকালীন সময়ে স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিলেন।  ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী শক্তির  বিরুদ্ধে  পিতা-পুত্রের সংগ্রামী মনোভাব  ইতিহাসে তাদেরকে অমর করে রেখেছে ।  অথচ মহীশূরের পাশের দুটি দেশ হায়দারাবাদ এবং মারঠা সাম্রাজ্য পরিস্থিতির গুরুত্ব হৃদয়ঙ্গমে ব্যর্থ হয়ে ইংরেজদের সহায়তা করে।  বিভাজন কৌশল অবলম্বন করে একটা দেশীয় সরকারকে পদানত করার নীতিতে ইংরেজ সফল হয়। ইংরেজরা দাক্ষিণ্যাত্যে নিজামের হায়দারাবাদ,মারাঠাদের মহারাষ্ট্র এবং টিপু সুলতানের মহীশূরকে পদানত করে বড় উপনিবেশ গড়ে তোলে। মারাঠাদের পরাভূত করে আগেই  দিল্লীকে করতলগত করেছিল। শুধু বাকি ছিল শিখ সাম্রাজ্য। ১৮৪৯   সালে শিখদের পাঞ্জাব জয় করার পর ইংরেজ সাম্রাজ্যকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ অবশিষ্ট ছিল না। 

ইংরেজের বিরুদ্ধে দেশীয় রাজাদের সংগ্রামে  বাংলার পর প্রথম রুখে দাঁড়ায় মহীশূর । হায়দার আলী  দাক্ষিণাত্যে ইংরেজদের আগ্রাসন বেশ ভালোভাবে  ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। ১৭৮২ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হায়দার আলীর মৃত্যুর পর তার পুত্র টিপু সুলতান পিতার ধারাবাহিকতায় ভারতীয় জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত ছিলেন । কয়েকটি যুদ্ধের পর  ইংরেজ বাহিনী ১৭৯৯  সালে  শ্রীরঙ্গপত্তম ঘেরাও করে । বাংলার মির জাফরের মতো টিপু সুলতানের এক অমাত্য মির সাদিকের বিশ্বাসঘাতকতা টিপুর পরাজয়কে ত্বরান্বিত করে। ভারতবর্ষের এই স্বাধীন সুলতান অবশেষে পরাজিত হয়ে শাহাদাত বরণ  করেন । টিপু ফরাসীদের সাথে  যোগাযোগ করে তাদের দ্বারা সেনাবাহিনী সমৃদ্ধ করেছিলেন। তিনি একধরনের মিসাইল উদ্ভাবন করেছিলেন যা ২ মাইল পর্যন্ত গোলা ছুঁড়তে সক্ষম ছিল।

শ্রীরঙ্গপত্তমে  পরাজয়ের পর টিপুর পরিবারের সদস্যদের ভেলোর দূর্গে বন্দী করে রাখা হয় । ১৮০৬ সালে টিপু সুলতানের বংশের নারী-পুরুষ  ভেলোর দূর্গে বন্দি থাকা অবস্থায় মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয় । ব্রিটিশ সেনাপতিগণ মুসলিম সৈন্যদের দাড়ি রাখা ও হিন্দু সৈন্যদের কপালে তিলক পরা নিষিদ্ধ করে । উভয় সম্প্রদায়ের জন্য মাথায় চামড়ার তৈরি একটা টারবান পরতে হতো। উচ্চ বর্ণের হিন্দু সিপাহীরা ধর্মনাশ হওয়ার ভয়ে  এটা পরতে  অস্বীকৃতি জানিয়ে  বিদ্রোহ করে । এ বিদ্রোহে টিপু সুলতানের পরিবার  যোগ দিয়েছিল।  ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে সংঘটিত এই বিদ্রোহ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এ উপমহাদেশে প্রথম সেনা বিদ্রোহ।  অথচ   স্বাধীন ভারতে সেভাবে  মহীশূরের মূল্যায়ন হয়নি। 

ভারতের মানচিত্রে এখন মহীশূর নামের  কোনো রাজ্য নেই । পূর্বতন মহীশূরের এখন কর্নাটক  রাজ্য। এই রাজ্যের ৩১ টি জেলার একটি জেলার নাম শুধু মহীশূর। একইভাবে নিজামের দেশ হায়দারাবাদেরও স্থান নেই  ভারতের রাজ্য-তালিকায়। তেলেঙ্গানা ছিল আগের হায়দারাবাদের  একটা অংশ।  পূর্বতন হায়দারাবাদের  কিছু অংশ মহারাষ্ট্র , কিছু অংশ কর্নাটকের সাথে যুক্ত করার পর তেলেঙ্গানা অংশটুকু অন্ধ্রপ্রদেশের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছিল। তেলেঙ্গানা পরে আলাদা রাজ্য হয়েছে  এবং তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দারাবাদ সিটি। মহীশূর এবং হায়দারাবাদের মতো মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির (রাজ্য) এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। মাদ্রাজ সিটির নাম চেন্নাই। রাজ্যের নাম তামিলনাড়ু। নাম বদলে রাজ্য পুনর্গঠনে স্বাধীন ভারতের কী লাভ হয়েছে আমরা জানি না। তবে ইংরেজদের লাভ হয়েছে  বেশি। তাদের ঔপনিবেশিক দুষ্কর্মের সাক্ষী স্থানগুলোর নাম মানুষের মন থেকে মুছে যাওয়ায় উপক্রম হয়েছে। 

 

(গাজী মিজানুর রহমান, সাবেক যুগ্মসচিব ও লেখক ) 

 

 

পাঠকের মতামত

তথ‍্য সমৃদ্ধ লেখা , ভাল লাগলো ।

শাকিল
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৮:১৫ অপরাহ্ন cricket exchangecrickex88.com

জনাব আব্দুল ওয়েজেদ মুন্সী সাহেবের বক্তব্যের সাথে সহমত পোষন করছি।

হায়দারাবাদের নিজাম ইংরেজদের সহোযোগীতা করে ফলে টীপুর পরাজয় ত্বরান্বিত হয়। নিজামের সমর্থন পেলে ইংরেজদের পরাজয় নিশ্চিত ছিলো। আপনার লেখায় ঐতিহাসিক তথ্যের ঘাটতি আছে।

মিলন আজাদ
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ২:০২ পূর্বাহ্ন cricket exchangecrickex88.com

উপরের আব্দুল ওয়াজেদ মুন্সীর মন্তব্যের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত।

শরীফুল আলম
৬ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ৫:১৩ অপরাহ্ন cricket exchangecrickex88.com

ভারত সব সময় সামপ্রদায়িক মনোভাব নিয়ে চলে, তারা শুধু এই স্থান গুলো ও ঘটনা সমুহের সাথে মুসলমান জড়িত একারণে নাম পরিবর্তন করেছে। তারা মনে করে ইংরেজ এবং ভারত একেই পথের পথিক এবং মুসলিম কে উভয় শত্রু মনে করে।

আব্দুল ওয়াজেদ মুন্সী
৬ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ২:৩৯ অপরাহ্ন cricket exchangecrickex88.com

সুন্দর লিখনী।

Abdullah Al Mamun Kh
৬ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ১২:৩২ অপরাহ্ন cricket exchangecrickex88.com

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.crickexgaming.com
DMCA.com Protection Status