শেষের পাতা
পাঁচ দাবি নিয়ে ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, যানজটে দুর্ভোগ
স্টাফ রিপোর্টার
২২ জুন ২০২৫, রবিবার
২৬ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘স্বেচ্ছাচারী আচরণের’ প্রতিবাদে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছে। গতকাল সকাল আটটা থেকে ঢাকার ভাটারার নতুন বাজার মোড় এলাকায় তারা সড়ক অবরোধ করে। এতে করে কুড়িল-বাড্ডা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিপরীত পাশে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। একপাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় দিনভর নগরবাসীকে ভোগান্তি নিয়ে ওই সড়কে চলাচল করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই যেসব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পূর্ণ তদন্ত না হওয়া এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। গতকাল পুলিশ সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে পৌনে ১১টার দিকে লাঠিচার্জ করে। আন্দোলনকারীরা কিছু সময় পর ফের নতুনবাজার মোড়ে এসে অবরোধ করে ফেলে। পুলিশ জানিয়েছে, জনভোগান্তি যাতে না হয় সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বারবার সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়তে রাজি হয়নি। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ।
এদিকে, বিকাল ৬টা পর্যন্ত এই অবরোধ চলছিল। বিকাল ৫টায় শিক্ষার্থীদের তরফে বলা হয়, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও আমাদের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও অন্যান্য শিক্ষককে আমাদের শিক্ষার্থীদের ও পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টার দুই দফায় মিটিংয়ে একাধিকবার বলা হলেও তারা নানাভাবে নানা নিয়ম কানুনের দোহাই দিয়ে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে চাইছেন। যা সমস্যা সমাধানে তাদের আন্তরিকতা না থাকা প্রমাণ করে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্ট জানিয়েছি, বৃহত্তর স্বার্থে আজকের মধ্যেই নিঃশর্তভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। এবং বিনা কারণে পুলিশ অন্যায়ভাবে যেভাবে প্রহার করেছে, নারী শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তুলেছে, লাথি মেরেছে তার অবশ্যই বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যার্থতার কারণে আজকের যে উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং শিক্ষা উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি আমাদের সাক্ষাৎ করে এর সমাধান করতে হবে। এর আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রাস্তা ত্যাগ করবে না।
ওদিকে আন্দোলনের মুখে গতকাল রাতে ২২ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় ইউআইইউ কর্তৃপক্ষ।
সরজমিন দেখা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভাটারা থানা সংলগ্ন কুড়িল থেকে রামপুরাগামী রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেছে। তবে সকাল থেকে রামপুরা-কুড়িলগামী রাস্তায়ও যান চলাচল বন্ধ ছিল তাদের আন্দোলনের কারণে। পরবর্তীতে দুপুরের পর এ রাস্তা থেকে ব্যারিকেড উঠিয়ে নেয় পুলিশ, ফলে যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলছেন তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে এবং তাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আহত করেছে। তারা পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা রাস্তা ছেড়ে যাবেন না বলে জানান।
এর আগে আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবি উপস্থাপন করেছেন।
দাবিগুলো হলো- ১। ইউআইইউ কর্তৃক অন্যায়ভাবে সব বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর নিঃশর্ত বহিষ্কার প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব শিক্ষার্থী শোকজ পেয়েছেন ও বহিষ্কৃত হয়েছেন তারা বিগত ২ মাস ধরে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এ ছাড়া নানা মানসিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অন্যায় সিদ্ধান্তের জন্য। সেজন্য বহিষ্কৃতদের বহিষ্কারাদেশ বিনা শর্তে তুলে নিতে হবে এবং যেসব একাডেমিক ও অন্যান্য ক্ষতি হয়েছে সেসবের ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। ২। বহিষ্কারের সঙ্গে জড়িত সব ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা। যেসব কর্তৃপক্ষ সদস্য, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, শিক্ষক, স্টাফ ও শিক্ষার্থীদের প্রমাণ ছাড়া মিথ্যা অভিযোগের কারণে ও কূট-কৌশলে শিক্ষার্থীরা অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের অন্যায়ের সুষ্ঠু তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ৩। ইউআইইউতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম-অসুবিধা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রিফর্ম দাবিসমূহ বাস্তবায়ন। ইউআইইউ রিফর্মের যেসব দাবি পূরণ করা হয়নি সেসব দাবি পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি যেসব কর্তৃপক্ষ সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে তাদের বহিষ্কার নিশ্চিত করতে হবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবসাকরণ ও মান অবনতির জন্য দায়ী। ৪। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ইউআইইউর সাম্প্রতিক অস্থিরতাসহ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সমস্যা সমাধানে উদাসীন। শত ছোটাছুটি করেও ইউআইইউ’র ক্রিটিক্যাল সমস্যার সমাধান তারা করতে পারেননি এবং তারা নিজেরাই তাদের অপারগতা স্বীকার করেছেন। তারা মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যাগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এজন্য কেবল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিষয় তদারকির জন্য একটি আলাদা ও স্বতন্ত্র মঞ্জুরি কমিশন গঠন করতে হবে। ৫। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিল করতে হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের আরোপিত ১৫ শতাংশ কর মওকুফ করতে হবে এবং সরকারি তদারকিতে এই বাঁচানো অর্থ শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
ডিএমপি’র বক্তব্য: গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি’র) মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল এক বার্তায় জানিয়েছেন, নতুনবাজারে ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ ছাড়াই আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করছেন, যা একেবারেই ভিত্তিহীন। তিনি জানান, ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের একাংশের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় নতুনবাজার মোড়ে ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন। কর্মসূচির শুরুতে কয়েক দফায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আলোচনা করেন এবং জনগণের চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি না করে রাস্তা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও জনগণের চলাচলের রাস্তা না ছাড়ায় জনগণের ভোগান্তি হ্রাসকল্পে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয় এবং পুলিশ আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুনরায় সড়ক দখল করে আন্দোলন শুরু করেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, এমন অবস্থায় ওই ঘটনা নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।
পাঠকের মতামত
রাস্তা অবরোধ যেই করুক, যে কারনেই করুক পিটিয়ে পাছার ছাল উঠাই ফেলতে হবে। লাউড এন্ড ক্লিয়ার উইথ নো অল্টারনেটিভ।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমনি এমনি নিজেদের ছাত্রছাত্রীকে বহিস্কার করে না। প্রতিষ্ঠানের মান ধরে রাখতে বা উন্নত মানে পৌছার জন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকারক ছাত্রছাত্রীকে বহিস্কার করতেই পারে। যদি তাই হয়, তবে শিক্ষার্থীদের উচিত হবে রাস্তা ছেড়ে ভদ্রতার সাথে ক্লাসের সিটে গিয়ে বসা।